হাদীস শরীফের বক্তব্য
চাঁদ দেখে বা চাঁদ দেখার গ্রহণযোগ্য সংবাদ শুনে রোযা রাখা:
শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনা অনুযায়ী রমজান মাস শুরু, ঈদ ইত্যাদি করা যাবেনা বরং অবশ্যই চাঁদ দেখতে হবে । এর দলীল হচ্ছে এই হাদীস ।
ইবনে উমার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, “আমরা উম্মী (নিরক্ষর) জাতি, আমরা লিখি না হিসাবও করিনা (যে) মাস এইরকম ও এইরকম” [(সহীহ বুখারী অধ্যায় ৩১ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৩৭) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮৮, হাদীস নং ১৯১৩)]
চাঁদ নির্ভর সকল ইবাদাত পালনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সকল ফকীহ ও আলেমগণ নিজ নিজ মতের সমর্থনে এই হাদীসগুলিকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন।
(১) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন-
“চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা ছাড়, (ঈদ কর)” । [(সহীহ মুসলিম অধ্যায় ৬ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৪, ২৩৬৮, ২৩৬৯, ২৩৭৮, ২৩৭৯, ২৩৮০, ২৩৮১) অথবা (মুসলিম শরীফ, অনুবাদ – আ.স.ম. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, খন্ড ৪, অধ্যায় ১৪ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৭, ২৩৭১, ২৩৭২, ২৩৮২, ২৩৮৩, ২৩৮৪, ২৩৮৫) (সহীহ বুখারী, অধ্যায় ৩০- কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৯০৯)]
মুসলিম শরীফের যে পৃষ্ঠায় হাদীসটির বর্ননা রয়েছে সে পৃষ্ঠায়ই হাদীসটির অর্থ করা হয়েছে এভাবে-
“ ‘এবং চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তোমরা রোযা ছাড়, ঈদ কর’। এর অর্থ হলো কিছু মুসলমানের দেখার মাধ্যমে উদয় প্রমাণিত হওয়া। এ শর্ত করা যাবেনা যে প্রত্যেক মানুষেরই চাঁদ দেখতে হবে। বরং যে কোন দেশের যে কোন দু'জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির দেখাই সকল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। বরং সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে রোযার ক্ষেত্রে একজন সৎ ব্যক্তির দেখাই সকলের আমলের জন্য যথেষ্ট । আর অধিকাংশ ফকীহগণের মতে শাওয়ালের নুতন চাঁদ প্রমাণের জন্য একজনের সাক্ষ্য যথেষ্ট হবেনা”। (শরহে নববীর উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(মুসলীম শরীফ, খন্ড-১, পৃঃ-৩৪৭, শরহে নাবাবী আলা মুসলিম ৭/১৯০)]
(২) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন-
“তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রাখবেনা এবং চাঁদ না দেখে রোযা ছাড়বেনা (ঈদ করবেনা)” । [(সহীহ বুখারী অধ্যায় ৩১ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৩০) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮৫, হাদীস নং ১৯০৬) (সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৪, হাদীস নং ১৭৮৫), (সহীহ মুসলিম অধ্যায় ৬ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৩, ২৩৬৭, ২৩৭০) অথবা (মুসলিম শরীফ, অনুবাদ – আ.স.ম. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, খন্ড ৪, অধ্যায় ১৪ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৬, ২৩৭০, ২৩৭৩)]
হাদীসটির ব্যাখ্যায় পবিত্র বোখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “ফাতহুল বারী”-তে আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন-
অর্থাৎ “রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর বাণী “فلاتصوموا حتى تروه” এর মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে চাঁদ দেখতে হবে এমন উদ্দেশ্য নেয়া যাবেনা। বরং পবিত্র বাণীটির উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু ব্যক্তির চাঁদ দেখা। জমহুর ফকীহ গণের মতানুসারে রমযানের চাঁদ একজনের দেখাই যথেষ্ট হবে। যা হানাফী ফকীহগণের মত। আর অন্যদের মতে দু’জনের দেখা যথেষ্ট হবে। এ মতামত অপরিচ্ছন্ন আকাশের ক্ষেত্রে, কিন্তু আকাশ যদি পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে এমন সংখ্যক ব্যক্তির চাঁদ দেখতে হবে যাদের সংখ্যা দ্বারা চাঁদ দেখার সংবাদ প্রমাণিত হবে। যারা এক দেশের দেখা অন্য দেশের জন্য প্রযোজ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন এটা তাদের মত। আর যারা প্রত্যেক দেশের জন্য চাঁদ দেখার মত প্রকাশ করেছেন তারা বলেছেন, ‘যতক্ষণ না তাকে দেখবে’ এর মাধ্যমে বিশেষ অঞ্চলের মানুষকে সম্বোধন করা হয়েছে, যা অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের এ মত হাদীসের প্রকাশ্য বক্তব্যের পরিবর্তন। অতএব চাঁদ দেখাকে প্রত্যেক মানুষের সাথে এবং প্রত্যেক দেশের সাথে সীমিত করা যাবে না”। (ইবনু হাজার আসকালানীর উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ফাতহুল বারী ফি শরহে ছহীহীল বুখারী, খন্ড-৪, পৃঃ-১৫৪)]
প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে চাঁদ দেখতে হবে এমন উদ্দেশ্য নেয়া যাবেনা, এই কথার দলীল হচ্ছে এই হাদীস,
আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ্ (দ.) বলেছেন, “...যদি (মুসলিমদের) দু’জন স্বাক্ষ্য দেয় যে, তারা (নতুন চাঁদ উদয়ের ব্যাপারে) দেখেছে, তাহলে তোমরা সাওম (রোজা) ও ঈদ পালন কর”। [নাসাঈ, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, হাদিস # ২১১৬।]
যে সকল ফিকাহবিদ ও আলেমগণ সমগ্র বিশ্বে একই দিনে আমলের পক্ষে ফাতওয়া দিয়েছেন তারা নিজেদের মতের সমর্থনে এই হাদীস গুলিকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। তাদের যুক্তি হল হাদীস গুলির মধ্যে বিশ্বনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর “তোমরা” বলে সম্বোধন দেশ মহাদেশের সীমানা পেরিয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে ব্যাপক অর্থবোধক সম্বোধন।
শুধু তাই নয়, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম নিজেও চাঁদ দেখার সংবাদ শুনে আমল করেছেন যা নিম্নে উল্লেখ করা হয়েছে ।
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিজ আমল:
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাঁর পবিত্র হায়াতে ২য় হিজরী থেকে ১০ম হিজরী পর্যন্ত সর্বমোট ৯ বার পবিত্র রমযান মাসের রোযা রেখে ছিলেন। তাই আমাদের গভীর দৃষ্টি দেয়া উচিৎ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর পবিত্র আমলের দিকে। রমযান মাসে রোযা রাখা এবং শাওয়াল মাসে ঈদ করার ক্ষেত্রে তিনি তাঁর পবিত্র আমলে, উক্ত হাদীস দু’টির প্রতিফলন কিভাবে করেছেন। উল্লেখিত হাদীস কারীমা অনুযায়ী রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি নিজে চাঁদ দেখে রোযা রেখেছেন, ঈদ করেছেন? না কি অন্যের দেখার সংবাদের মাধ্যমেও রোযা রেখেছেন, ঈদ করেছেন? এ প্রসংগে পবিত্র হাদীস শরীফে যে প্রমাণ পাওয়া যায় তা হচ্ছে-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “কিছু সংখ্যক মানুষ (রমযানের) নতুন চাঁদ দেখল। আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-কে সংবাদ দিলাম যে আমিও উক্ত চাঁদ দেখেছি। ফলে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রোযা রাখলেন এবং মানুষকেও রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন।" [(আবু দাউদ, সহীহ, হাদীস নং ২৩৪২, ইংরেজি অনুবাদ হাদীস নং ২৩৩৫) (তিরমিজি ৭৫৩, বায়হাকী ৮২৩৫, দারেমী) – (মিশকাত, পৃঃ-১৭৪)]
এমনি ভাবে হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “একজন মরুচারী মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিকট আসলো এবং বললো, আমি প্রথম চাঁদ অর্থাৎ রমযানের চাঁদ দেখেছি। তখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই একথা সাক্ষ্য দান কর? সে বলল হ্যাঁ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আল্লাহর রসূল তুমি কি একথা সাক্ষ্য দান কর? সে বলল হ্যাঁ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বললেন, হে বেলাল মানুষের কাছে ঘোষণা করে দাও তারা যেন আগামী দিন রোযা রাখে”। [(আবু দাউদ হাদীস নং ২৩৪০, ইংরেজি অনুবাদ ২৩৩৩), তিরমিযী ৬৯১, পৃঃ-১৪৮; নাসায়ী ২১১২, পৃঃ-২৩১; ইবনু মাজাহ পৃঃ-১১৯, বায়হাকি ৮২৩০, মিশকাত পৃঃ-১৭৪)]
হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
হযরত আবু উমাইর ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত “রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিকট একদল আরোহী আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে তারা গতকাল (শাওয়ালের) চাঁদ দেখেছে। ফলে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মানুষকে রোযা ছাড়ার আদেশ দিলেন। পরের দিন প্রাতঃকালে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হলেন”। [(আবু দাউদ, সহীহ, হাদীস নং ১১৫৭, ইংরেজি অনুবাদ হাদীস নং ১১৫৩, নাসায়ী, মিশকাত-১২৭)]
অত্র হাদিসের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের উক্ত পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-
“তারা ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে সমাবেত হল। আল্লামা মাজহার বলেন যে ঐ বছর মদীনা শরীফে ২৯শে রমযান দিবাগত রাতে শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে মদীনা বাসী ৩০ রমযানের রোযা রেখে ছিলেন। এমতাবস্থায় ঐ দিন দ্বিপ্রহরে একদল ছাওয়ারী দূর থেকে আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে, নিশ্চয়ই তারা ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে নুতন চাঁদ দেখেছে। অতপর, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাদের এ সংবাদ গ্রহণ করে সকলকে রোযা ভঙ্গের নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন (২রা শাওয়াল) ঈদের নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন।“ (মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(মিরকাতুল মাফাতিহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৫/১৫৩)]
অত্র হাদীস তিনটিতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিজ আমল দ্বারা নিম্নোক্ত বিষয় গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়।
(১) মাস প্রমাণের জন্য সকলের চাঁদ দেখা জরুরী নয়, অন্যের দেখার গ্রহণযোগ্য সংবাদ শুনার মাধ্যমেও মাস প্রমাণিত হবে, ফলে রমজানে রোযা এবং শাওয়ালের চাঁদে ঈদ করতে হবে ।
(২) নিজ দেশের আকাশে নতুন চাঁদ দেখতে হবে এমন শর্ত করা যাবে না।
(৩) রমজানের চাঁদ না দেখতে পেলে এবং চাঁদ দেখার কোন সংবাদ না পেলে শাবান ৩০ পূর্ণ করার পর রোজা শুরু করতে হবে। আর ঈদুল ফিতরের চাঁদ না দেখতে পেলে এবং চাঁদ দেখার কোন সংবাদ না পেলে রমজান ৩০ পূর্ণ করে ঈদ করতে হবে। কিন্তু যে কোথাও চাঁদ দেখার গ্রহণযোগ্য সংবাদ পেলেই সেই সংবাদ দূর থেকে আসলেও সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে।
রমজান মাসের ফযিলাত বিশ্বব্যাপী একই দিনে শুরু:
পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য রমজান মাস যে একই দিনে শুরু হয় তার সুস্পষ্ট প্রমাণ এই হাদীস দুটি,
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়” [(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪০-২৪১, হাদীস নং ১৭৭৭) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৮)]
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।” [(সহীহ বুখারী, খন্ড ৩, হাদীস নং ১২৩ অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় - সাওম, হাদীস নং ৯, অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় ৩১, হাদীস নং ১২৩) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৯) অথবা (সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪১, হাদীস নং ১৭৭৮,)]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্ট ৮টি জান্নাত ও ৭টি জাহান্নাম কোন অঞ্চল বিশেষের মানুষের জন্য নয় বরং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। তাই এই হাদীসের বর্ণনা মতে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এবং জাবের রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীস মতে আল্লাহ তায়ালার রহমতের দৃষ্টি দান করা রমযানের নতুন চাঁদ উঠার সঙ্গে সঙ্গেই সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য একই দিনে সমভাবে শুরু হয়। বাংলাদেশের স্থানীয় আকাশে চাঁদ দেখা যেতে ১দিন বা ২দিন বিলম্ব হওয়ায় উল্লেখিত কার্যক্রম এদেশের জন্য এক বা দু’দিন পরে শুরু হওয়া অথবা পুনরায় হওয়া বিবেক গ্রাহ্য নয়। তাই এই হাদীসে প্রমাণিত হল যে পবিত্র রমযানের ফযিলতের কার্যকারিতা আল্লাহ তায়ালার দরবারেও বিশ্বময় একই দিনে শুরু হয়। অতএব দেশ মহাদেশের ভিন্নতায় রমযান ও অন্যান্য ইবাদাত কখনই ভিন্ন ভিন্ন দিনে মেনে নেওয়া যায় না।
ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহা সম্পর্কিত হাদীস:
একটি হাদীসে আয়েশাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত,
" الْفِطْرُ يَوْمَ يُفْطِرُ النَّاسُ وَالأَضْحَى يَوْمَ يُضَحِّي النَّاسُ "
রসূলুল্লাহ্ (দ.) বলেছেন, “ঈদুল ফিতর হলো ঐ দিন যেদিন মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকে এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঐ দিন যেদিন মানুষ ঈদুল আযহা পালন করে থাকে।” [(তিরমিযী, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ২, কিতাবুস্ সওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৮, (ঈদুল) ফিতর এবং (ঈদুল) আযহা কখন হবে, হাদিস # ৮০২)]
এই হাদিসে রসূলুল্লাহ্ (সঃ) “ইয়াওমা” শব্দ ব্যবহার করেছেন।“ইয়াওমা” শব্দটি একবচন, যার অর্থ “একদিন”। রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বহুবচন শব্দ “আইয়্যামা” ব্যবহার করেননি। আর “আন্নাসু” শব্দটি “ইনসান” শব্দের বহুবচন হওয়ায় সকল মানুষ তথা সারা পৃথিবীর সকল মুসলিমদের বোঝানো হয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ্ বলেন,
“হে মানবজাতি তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর...-[(সূরা নিসা, ৪/১)]
এই আয়াতটিতে “আন্নাসু” শব্দটির দ্বারা সকল মানুষকে বুঝানো হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে হাদিসটিতেও “আন্নাসু” শব্দটি দ্বারা সকল মানুষকে অর্থাৎ সকল মুসলিমকে বলা হয়েছে। সুতরাং হাদীসটির ব্যাখ্যা দাঁড়ায় “ঈদুল ফিতর হলো ঐ একদিন যেদিন সারা পৃথিবীর সকল মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকে এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঐ একদিন যেদিন সারা পৃথিবীর সকল মানুষ ঈদুল আযহা পালন করে থাকে”।
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি ঈদুল ফিতর সারা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য একই দিন এবং ঈদুল আযহাও সকল মানুষের জন্য একই দিন।
হাদীসে আরো বর্নিত হয়েছে
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ্ (দ.) ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সওম (রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ ৩০, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৬৬, ঈদুল ফিতরের দিনে স্বওম রাখা, হাদিস # ১৯৯০, ১৯৯১, অনুচ্ছেদঃ ৬৭, কুরবানীর দিনে স্বওম, হাদিস # ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫, অধ্যায়ঃ ৭৩, কুরবানী, অনুচ্ছেদঃ ১৬, কুরবানীর গোশত থেকে কতটুকু খাওয়া যাবে অথবা কতটুকু সঞ্চয় করে রাখা যাবে, হাদিস # ৫৫৭১, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৩, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ২২, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে স্বওম পালন না করা, হাদিস # ১৩৮/১১৩৭, -১৩৯,১৪০,১৪১/১১৩৮, -১৪২/১১৩৯, -১৪৩/১১৪০, আবু দাউদ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৪৮, দুই ঈদের দিন স্বওম পালন, হাদিস # ২৪১৬, ২৪১৭, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৭, স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৩৬, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭২১, ১৭২২, বায়হাক্বী (সুনানুল কুবরা), স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৫, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম না রাখা, হাদিস # ৮২৪৮, ৮২৪৯, ৮২৫০, দারিমী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৪৩, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭৫৩ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]
বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ করলে দেখা যাবে একটি অঞ্চলে যেদিন ঈদ, অন্য অঞ্চলে সেদিন রোজা অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।
|